জামায়াতের ঢাকা মহড়া: ফেব্রুয়ারি ২০২৬ নির্বাচনের পথে ৫ দফা দাবির আওয়াজ, রাজনীতিতে ইসলামপন্থী শক্তির উত্থান!
বর্তমান কর্মকাণ্ড: রাস্তায় নামা এবং কূটনৈতিক সক্রিয়তা
বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী গত কয়েক মাস ধরে সক্রিয়তর হয়ে উঠেছে। ১৫ সেপ্টেম্বর এক জনাকীর্ণ সংবাদ সম্মেলনে দলটি ১৮, ১৯ ও ২৬ সেপ্টেম্বরের ৩-দিনের কর্মসূচি ঘোষণা করে, যার মধ্যে আজকের ঢাকা মহানগরী উত্তর-দক্ষিণের যৌথ উদ্যোগে অনুষ্ঠিত সমাবেশ অন্যতম। নায়েবে আমীর ডা. সৈয়দ আব্দুল্লাহ মো. তাহের প্রধান অতিথি এবং সেক্রেটারি জেনারেল অধ্যাপক মিয়া গোলাম পরওয়ার বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন। সমাবেশে কেন্দ্রীয় ও মহানগর নেতৃবৃন্দ বক্তব্য রাখেন, যাতে পিআর পদ্ধতি ছাড়া সুষ্ঠু নির্বাচন অসম্ভব বলে জোর দিয়ে বলা হয়।
এছাড়া, বিসিএস পরীক্ষার্থীদের সুবিধার্থে ১৮-১৯ সেপ্টেম্বরের কর্মসূচি সকালের পরিবর্তে বিকেলে স্থানান্তর করা হয়েছে, যা দলটির দায়িত্বশীলতার পরিচয় দেয়। ১৯ সেপ্টেম্বর বিভাগীয় শহরগুলোতে কেন্দ্রীয় নেতাদের উপস্থিতিতে অনুরূপ সমাবেশ হবে, যেমন রংপুরে সেক্রেটারি জেনারেল মিয়া গোলাম পরওয়ার।
জামায়াতের কর্মকাণ্ড শুধু রাজপথে সীমাবদ্ধ নয়। সাম্প্রতিককালে আমীর ডা. শফিকুর রহমানের সঙ্গে ইউরোপীয় পার্লামেন্টের উচ্চপর্যায়ের প্রতিনিধিদল, চীনা রাষ্ট্রদূত, রাশিয়ান রাষ্ট্রদূত, পাকিস্তানের উপপ্রধানমন্ত্রীসহ বিভিন্ন দেশের কূটনীতিকের সৌজন্য সাক্ষাৎ হয়েছে। এসব বৈঠকে নির্বাচনী সংস্কার, পিআর পদ্ধতি এবং বাংলাদেশের রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা নিয়ে আলোচনা হয়েছে। এছাড়া, সিঙ্গাপুর হাইকমিশনারের সঙ্গে শিল্প-বাণিজ্য এবং নির্বাচনী পরিবেশ নিয়ে আলোচনা হয়েছে। দলটি মাদ্রাসা শিক্ষকদের এমপিও অন্তর্ভুক্তির দাবিতেও সক্রিয়, যা সাম্প্রতিক বিবৃতিতে উল্লেখ করা হয়েছে।
আগামী নির্বাচনে ভূমিকা: পিআর-এর পক্ষে জোট গঠন, একক জয়ের স্বপ্ন নয়
আগামী ফেব্রুয়ারি ২০২৬-এর জাতীয় সংসদ নির্বাচন বাংলাদেশের অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের ঘোষিত রোডম্যাপের অংশ। জামায়াত এই নির্বাচনে অংশগ্রহণ করবে বলে ইঙ্গিত দিয়েছে, কিন্তু তাদের মূল দাবি পিআর পদ্ধতির প্রয়োগ। নায়েবে আমীর ডা. তাহের বলেছেন, "প্রথাগত পদ্ধতিতে ৫৪ বছরের নির্বাচন সুষ্ঠু হয়নি; পিআর হলে কেন্দ্র দখলের প্রবণতা কমবে।" ৩১ দলের মধ্যে ২৬টি পিআর-এর পক্ষে, যার মধ্যে জামায়াতের নেতৃত্ববিশিষ্ট।
দলটি এককভাবে নির্বাচন জিততে না পারলেও, ন্যাশনাল সিটিজেন পার্টির সঙ্গে জোট গঠন করে প্রভাব বিস্তার করছে। জুন ২০২৫-এ সুপ্রিম কোর্টের রায়ে নিষিদ্ধকরণ তুলে নেওয়ার পর জামায়াতের পুনরুজ্জীবন ঘটেছে, যা রাজনীতিকে ডানপন্থী ও ইসলামপন্থী দিকে ঝুঁকিয়েছে। জুলাই ২০২৫-এ ঢাকায় mega rally করে তারা শক্তি প্রদর্শন করেছে।
বাংলাদেশের রাজনীতিতে ভূমিকা: ঐতিহাসিক পুনরুত্থানের সাথে চ্যালেঞ্জ
বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় ইসলামপন্থী দল হিসেবে জামায়াতের ইতিহাস ১৯৪১ সালের। ২০০১-০৬ সালে বিএনপি-জামায়াত জোটে দুই মন্ত্রী ছিলেন, কিন্তু ২০১৩-এ নিষিদ্ধ হওয়ার পর তারা ছায়াময় হয়ে যায়। ২০২৪-এর জুলাই বিপ্লবের পর নতুন সুযোগ পেয়ে দলটি সংস্কারের দাবিতে সক্রিয়।
বর্তমানে জামায়াত গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠায় ইতিবাচক ভূমিকা পালন করছে বলে কূটনীতিকরা মনে করেন। তবে, কিছু সমালোচক র্যাডিকালাইজেশনের আশঙ্কা করছেন। দলটি মসজিদ-মাদ্রাসা প্রতিষ্ঠায় সক্রিয়, যা তাদের জনপ্রিয়তা বাড়ায়।
জামায়াতের এই উত্থান বাংলাদেশের রাজনীতিতে নতুন ভারসাম্য সৃষ্টি করতে পারে, কিন্তু সংস্কারের বাস্তবায়নই চ্যালেঞ্জ।