বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকার চট্টগ্রামের মিরসরাইয়ে ভারতের আদানি পোর্টস অ্যান্ড স্পেশাল ইকোনমিক জোনস (এসইজেড) লিমিটেডের জন্য প্রায় ৯০০ একর জমি বরাদ্দের একটি বিতর্কিত চুক্তি পুনর্বিবেচনা করছে। সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আমলে শুরু হওয়া এই চুক্তি ভারতীয় বিনিয়োগকারীদের জন্য অবকাঠামো তৈরির লক্ষ্যে করা হয়েছিল। তবে নিরাপত্তা উদ্বেগ, স্থানীয় বিক্ষোভ এবং রাজনৈতিক পরিবর্তনের কারণে প্রকল্পটি স্থগিত রয়েছে। চুক্তির মূল বিষয়গুলো নিশ্চিত হলেও বাতিলের প্রচেষ্টা এবং সার্বভৌমত্বের ঝুঁকির সাম্প্রতিক দাবি আরও যাচাই প্রয়োজন।
পটভূমি এবং চুক্তি
- ২০১৫ সালে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির ঢাকা সফরে মিরসরাই এবং মোংলায় ভারতীয় প্রতিষ্ঠানের জন্য জমি বরাদ্দের একটি সমঝোতা স্মারক (এমওইউ) স্বাক্ষরিত হয়। ২০১৭ সালে হাসিনার দিল্লি সফরে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব শিল্পনগরে (বিএসএমএসএন) ৯০০-১,০০০ একর জমি চূড়ান্ত করা হয়।
- বাংলাদেশ অর্থনৈতিক অঞ্চল কর্তৃপক্ষ (বেজা) ২০১৯ সালে ৮৫৭-১,০০০ একর জমির জন্য ৮৪৫ কোটি টাকার (প্রায় ১১৫ মিলিয়ন ডলার) প্রকল্প অনুমোদন করে, যা ভারতীয় লাইন অব ক্রেডিট (এলওসি) দ্বারা অর্থায়িত। আদানি ২০১৯ সালের অক্টোবরে একটি এমওইউ এবং ২০২২ সালের এপ্রিলে একটি যৌথ উদ্যোগ চুক্তি স্বাক্ষর করে, যেখানে ৬৫% সরঞ্জাম ভারত থেকে ক্রয়ের শর্ত ছিল। জমির কোনো মূল্য নির্ধারণ করা হয়নি, এবং উন্নয়ন কাজ ভারতীয় প্রতিষ্ঠানের নিয়ন্ত্রণে, বাংলাদেশি প্রতিষ্ঠান বাদ পড়েছে।
- ২০১৮ সালে আরও ৭০০ একর জমি অধিগ্রহণ করা হয়, মোট ~১,৬০০ একর, তবে আদানির জন্য শুধু ৯০০ একর বরাদ্দ। এই জমি মূলত বাংলাদেশ নৌবাহিনীর ঘাঁটির জন্য পরিকল্পিত ছিল।
বর্তমান অবস্থা ২০২৪ সালের আগস্টে হাসিনার পতনের পর আদানি কার্যক্রম বন্ধ করে, এলাকাটি এখন অরক্ষিত। বেজা জাতীয় স্বার্থের কথা উল্লেখ করে প্রধান উপদেষ্টার কাছে এলওসি ও প্রকল্প বাতিলের অনুরোধ জানিয়েছে। আট মাস আগে (প্রায় জানুয়ারি ২০২৫) বাংলাদেশ ভারতের কাছে পুনর্মূল্যায়নের জন্য চিঠি পাঠায়, জবাবের অপেক্ষায় রয়েছে।
অগ্রগতি নগণ্য: ২০২৪ সালের মার্চ পর্যন্ত মাত্র ৫.৮৮ কোটি টাকা ব্যয়; সময়সীমা জুন ২০২৫ পর্যন্ত বাড়ানো হয়েছে। আদানির আগ্রহ কম, এবং ২০২৪-এর পর ইন্দো-বাংলা সম্পর্কের টানাপোড়েনে প্রকল্প স্থগিত। ৭০০ একর মৌখিক প্রতিশ্রুতি ছিল, চুক্তি না থাকায় তা মুক্ত করা সম্ভব।
বিতর্ক ও উদ্বেগ
নিরাপত্তা ও সার্বভৌমত্ব: বঙ্গোপসাগর, ফেনী নদী এবং “চিকেন নেক” করিডোরের নৈকট্যের কারণে ভারতের নিয়ন্ত্রণ নিয়ে ভয় রয়েছে, যা চট্টগ্রাম, কক্সবাজার এবং পার্বত্য জেলার প্রবেশপথকে প্রভাবিত করতে পারে। অধ্যাপক মাহবুব উল্লাহর মতো বিশেষজ্ঞরা এটিকে “মিনি ইন্ডিয়া” বলে স্বাধীনতার জন্য হুমকি মনে করেন।
স্থানীয় প্রভাব: উর্বর জমি অধিগ্রহণে কৃষকদের বিক্ষোভ; স্থানীয়দের জন্য কোনো কর্মসংস্থান বা উপকরণ ব্যবহারের ব্যবস্থা নেই, সব ভারতীয় শ্রমিক ও সরঞ্জামে নির্ভরশীল। বাসিন্দারা প্রবেশ নিষিদ্ধ এবং পরিবেশগত ঝুঁকির কথা উল্লেখ করেছেন।
স্বচ্ছতার অভাব: চুক্তিতে দরপত্র নেই; বেজার স্থানীয় ঠিকাদারদের অন্তর্ভুক্তির অনুরোধ উপেক্ষিত। কার্যক্রমের ওপর তদারকির অভাব, “একতরফা” ভারতীয় স্বার্থের অভিযোগ।
যাচাইয়ের ঘাটতি: বিলম্ব এবং পুনর্মূল্যায়ন নিশ্চিত হলেও, ২০২৫-এর বাতিল প্রচেষ্টা বা “বিপাক” দাবি প্রধান সূত্রে নিশ্চিত নয়। সাম্প্রতিক এক্স পোস্টে ২০২৫-এর বিতর্কের বিস্তারিত নেই, সম্ভবত সীমিত প্রচারের কারণে।
এই চুক্তি ইন্দো-বাংলা অর্থনৈতিক সম্পর্কের প্রতীক হলেও ন্যায্যতা ও নিরাপত্তা নিয়ে উত্তেজনা তৈরি করেছে। বাতিল হলে দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কে প্রভাব পড়তে পারে; চলমান পুনর্মূল্যায়ন পুনঃআলোচনা বা পরিত্যাগের দিকে নিয়ে যেতে পারে।