জামায়াতের উত্থান: ২০২৬ নির্বাচনে বাংলাদেশের রাজনীতিতে কি আসছে বিপ্লবী পরিবর্তন?
জামায়াত ও ছাত্রশিবিরের উত্থান: জুলাই আন্দোলনের ফসল?
২০২৪-এর জুলাই আন্দোলন, যা শেখ হাসিনা সরকারের পতন ঘটায়, তাতে ছাত্রশিবিরের ভূমিকা ছিল উল্লেখযোগ্য। আন্দোলনের সংগঠক সারজিস আলমসহ অনেকে স্বীকার করেছেন যে শিবির রাস্তায় সক্রিয় সহযোগী ছিল। আওয়ামী লীগের পতনের পর জামায়াতে ইসলামী, যা দীর্ঘদিন নিষিদ্ধ ও দমিত ছিল, পুনরুত্থিত হয়েছে। বিভিন্ন সার্ভে অনুসারে, ২০২৪-এর অক্টোবর থেকে ২০২৫-এর জুলাই পর্যন্ত জামায়াতের সমর্থন ১১.৩% থেকে কমে ১০.৪% হয়েছে, কিন্তু রাজধানীতে হাজারো সমর্থকের সমাবেশ এবং ডাকসু জয় দেখিয়ে দিচ্ছে যে তাদের সাংগঠনিক শক্তি বেড়েছে।
বিশ্লেষকরা বলছেন, জুলাই আন্দোলনের ‘জুলাই প্রজন্ম’-এর মধ্যে শিবিরের প্রভাব বেড়েছে কারণ তারা সরকারবিরোধী আন্দোলনে সামনের সারিতে ছিল। ডাকসুতে ভিপি পদে সাদিক কায়েমের ১৪,০৪২ ভোট এবং অন্যান্য পদে বিজয় দেখিয়ে দিচ্ছে যে যুবসমাজে তাদের আবেদন বাড়ছে। জামায়াতের রাজনৈতিক প্ল্যাটফর্মও পরিবর্তিত—তারা এখন ইসলামি ঐক্যের কথা বলে বিএনপি-কে চাপে ফেলছে, এমনকি বিএনপি-কে নিষিদ্ধ করার হুমকি দিচ্ছে।
২০২৬ নির্বাচনে প্রভাব: ডানপন্থী স্থানান্তর এবং ভোট বিভাজন
অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান মুহাম্মদ ইউনুস ঘোষণা করেছেন যে ২০২৬-এর ফেব্রুয়ারি বা এপ্রিলে নির্বাচন হবে। আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধ হলে প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বিতা হবে বিএনপি, জামায়াত এবং নতুন পার্টি যেমন ন্যাশনাল সিটিজেনস পার্টি (এনসিপি)-এর মধ্যে। জামায়াতের উত্থান রাজনীতিকে ডানপন্থী করে তুলছে, যা ভোট বিভাজন ঘটাতে পারে। বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, জামায়াত ২০-৩০% ভোট পেতে পারে, বিশেষ করে গ্রামীণ এলাকায় এবং যুবকদের মধ্যে। এটি বিএনপি-কে দুর্বল করবে, কারণ জামায়াতের সাথে ঐতিহাসিক কোয়ালিশন থাকলেও এখন তারা প্রতিদ্বন্দ্বী।
অন্যদিকে, এনসিপি-এর মতো নতুন পার্টি জনপ্রিয়তা বাড়াচ্ছে (সার্ভে অনুসারে বিএনপি-র সমর্থন কমছে), যা জামায়াতকে আরও শক্তিশালী করে তুলতে পারে। ফলে নির্বাচন অস্থিরতা বাড়াতে পারে, এবং ইসলামিস্টদের ক্ষমতায় আসা ধর্মীয় সংখ্যালঘু এবং উদারপন্থীদের জন্য চ্যালেঞ্জ তৈরি করবে।
বিএনপির চাঁদাবাজি-সহিংসতা: আওয়ামী লীগের মতো পরিণতি?
বিএনপি-র বিরুদ্ধে ২০২৫-এ চাঁদাবাজি, সহিংসতা এবং অভ্যন্তরীণ সংঘর্ষের অভিযোগ উঠেছে। নারায়ণগঞ্জে নেতাদের গ্রেপ্তার, ল্যান্ড অকুপেশন এবং প্রতিহিংসার ঘটনা দলের ছবি নষ্ট করছে। বিশ্লেষকরা বলছেন, এই প্রবণতা বন্ধ না হলে বিএনপি আওয়ামী লীগের মতো জনপ্রিয়তা হারিয়ে পড়বে। তরিক রহমানের নেতৃত্বে দলটি ছবি গড়ার চেষ্টা করলেও, গ্রাসরুট লেভেলের অরাজকতা (যেমন মার্ডার এবং এক্সটর্শন) এটিকে বাধা দিচ্ছে। ফলে, নির্বাচনে বিএনপি-র সমর্থন কমতে পারে, এবং জামায়াতের মতো দলগুলো সুবিধা নেবে।
বাংলাদেশের ভবিষ্যতের চ্যালেঞ্জ
২০২৬ নির্বাচন বাংলাদেশের জন্য টার্নিং পয়েন্ট। জামায়াত-শিবিরের উত্থান ডানপন্থী রাজনীতিকে শক্তিশালী কববে। বিএনপি-র জন্য এটি সতর্কতার সময়—চাঁদাবাজি বন্ধ করে ছবি পুনর্গঠন না করলে, তারা আওয়ামী লীগের মতো অপ্রাসঙ্গিক হয়ে পড়বে। অন্তর্বর্তী সরকারকে সংস্কার নিশ্চিত করতে হবে, অন্যথায় অস্থিরতা বাড়বে। এই নির্বাচন শুধু ক্ষমতার লড়াই নয়, বাংলাদেশের পরিচয়ের লড়াই।