ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু) নির্বাচনে বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবির সমর্থিত ‘ঐক্যবদ্ধ শিক্ষার্থী জোট’ ২৮টি পদের মধ্যে ২৩টিতে বিপুল ভোটে জয়লাভ করেছে। ফলাফল ঘোষণা করা হয় বুধবার সকালে বিশ্ববিদ্যালয়ের সিনেট ভবনে, প্রধান নির্বাচন কমিশনার অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ জসীম উদ্দিনের নেতৃত্বে।
ছাত্রশিবির সমর্থিত জোটের মূল জয়
- সহ-সভাপতি (ভিপি): মো. আবু সাদিক (সাদিক কায়েম) ১৪,০৪২ ভোট পেয়ে জয়ী হয়েছেন। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী ছাত্রদলের আবিদুল ইসলাম খান পেয়েছেন ৫,৭০৮ ভোট।
- সাধারণ সম্পাদক (জিএস): এস এম ফরহাদ ১০,৭৯৪ ভোট নিয়ে জয়লাভ করেন। ছাত্রদলের তানভীর বারী হামীম পান ৫,২৮৩ ভোট, এবং প্রতিরোধ পর্ষদের মেঘমল্লার বসু পান ৪,৯৪৯ ভোট।
- সহ-সাধারণ সম্পাদক (এজিএস): মুহা. মহিউদ্দিন খান ১১,৭৭২ ভোট পেয়ে জয়ী হন। ছাত্রদলের তানভীর আল হাদী মায়েদ পান ৫,০৬৪ ভোট।
অন্যান্য উল্লেখযোগ্য জয়ের মধ্যে রয়েছে:
- মুক্তিযুদ্ধ ও গণতান্ত্রিক আন্দোলন সম্পাদক: ফাতেমা তাসনিম জুমা, ১০,৬৩১ ভোট।
- আন্তর্জাতিক সম্পাদক: খান জসিম, জুলাই আন্দোলনে চোখ হারানো পরিচিত মুখ, ৯,৯৩০ ভোট।
- কমন রুম, রিডিং রুম ও ক্যাফেটেরিয়া সম্পাদক: উম্মে সালমা, ৯,৯২০ ভোট।
- ক্যারিয়ার ডেভেলপমেন্ট সম্পাদক: মাজহারুল ইসলাম, ৯,৩৪৪ ভোট।
- সদস্য পদ: সাবিকুন্নাহার তামান্না (১০,০৮৪ ভোট), সর্ব মিত্র চাকমা (৮,৯৮৮ ভোট) সহ অন্যরা।
ইংরেজি বিভাগের এক দম্পতি, রায়হান উদ্দিন ও উম্মে সালমা, যথাক্রমে সদস্য ও কমন রুম সম্পাদক পদে জয়ী হয়েছেন।
স্বতন্ত্র প্রার্থীদের পাঁচটি পদে জয়
ছাত্রশিবিরের আধিপত্য সত্ত্বেও পাঁচটি পদে স্বতন্ত্র প্রার্থীরা জয়লাভ করেছেন:
- সমাজসেবা সম্পাদক: যুবাইর বিন নেছারী।
- সাহিত্য ও সাংস্কৃতিক সম্পাদক: মুসাদ্দিক আলী ইবনে মোহাম্মদ।
- গবেষণা ও প্রকাশনা সম্পাদক: সানজিদা আহমেদ তন্বী, জুলাই আন্দোলনের পরিচিত মুখ, ১১,৭৭৭ ভোট।
- সদস্য পদ: হেমা চাকমা এবং উম্মু উসউয়াতুন রাফিয়া।
নির্বাচনের বিবরণ
মঙ্গলবার সকাল ৮টা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত আটটি কেন্দ্রে ৮১০টি বুথে ভোটগ্রহণ হয়। প্রায় ৪০,০০০ ভোটারের মধ্যে ৮০ শতাংশের বেশি ভোট দিয়েছেন। মোট ৪৭১ জন প্রার্থী, যার মধ্যে ৬২ জন নারী, ২৮টি কেন্দ্রীয় পদে এবং ১,০৩৫ জন প্রার্থী ১৮টি হলের ২৩৪টি পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছেন।
বিতর্ক ও উল্লেখযোগ্য ঘটনা
সদস্য পদে সর্বোচ্চ ভোট পাওয়া সাবিকুন্নাহার তামান্নার প্রচারণা পোস্টার বিকৃত করা নিয়ে বিতর্ক হয়। এ ঘটনাকে নারীর প্রতি বিদ্বেষের প্রকাশ হিসেবে দেখা হয়, এবং তামান্না এটিকে প্রচারণার হাতিয়ারে রূপান্তরিত করেন। তিনি ফেসবুকে লিখেছিলেন, “স্বপ্নের ক্যাম্পাস গড়ার পথযাত্রী, আমরা থামব না।”
নির্বাচনে ছাত্রশিবিরের প্রভাব ছিল উল্লেখযোগ্য। সাদিক কায়েম, বৈষম্যবিরোধী আন্দোলন ও আওয়ামী লীগ সরকারের পতনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালনকারী নেতা, এবারের নির্বাচনে অন্যতম প্রভাবশালী ব্যক্তিত্ব হিসেবে আবির্ভূত হয়েছেন।