ITGenius24 Logo

Sunday, November 23, 2025 01:39 AM

ডাকসু নির্বাচন: আইনি নাটক ও শিশির মনিরের তৎপরতা

ডাকসু নির্বাচন: আইনি নাটক ও শিশির মনিরের তৎপরতা
https://www.facebook.com/shishir.manir/photos থেকে সংগ্রহীত।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু) নির্বাচন নিয়ে সাম্প্রতিক ঘটনাপ্রবাহ বাংলাদেশের ছাত্র রাজনীতি ও আইনি ক্ষেত্রে একটি তাৎপর্যপূর্ণ অধ্যায় রচনা করেছে। ১ সেপ্টেম্বর ২০২৫, হাইকোর্টের বিচারপতি হাবিবুল গণি ও বিচারপতি শেখ তাহসিন আলীর বেঞ্চ ডাকসু নির্বাচন আগামী ৩০ অক্টোবর পর্যন্ত স্থগিত করার আদেশ দেন। এই আদেশ এসেছিল ঐক্যবদ্ধ শিক্ষার্থী জোটের সাধারণ সম্পাদক (জিএস) পদপ্রার্থী এস এম ফরহাদের প্রার্থিতার বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে বামজোটের প্রার্থী বিএম ফাহমিদা আলমের দায়ের করা রিটের প্রেক্ষিতে। হাইকোর্টের এই সিদ্ধান্ত নির্বাচনের নির্ধারিত তারিখ ৯ সেপ্টেম্বরের মাত্র আট দিন আগে এসেছিল, যা নির্বাচনের প্রক্রিয়াকে পুরোপুরি স্তব্ধ করে দেওয়ার ঝুঁকি তৈরি করেছিল।

কিন্তু নাটকীয় মোড় নেয় ঘটনা যখন একই দিন বিকেলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষে আইনজীবী মোহাম্মদ শিশির মনির তড়িৎ সিদ্ধান্তে চেম্বার আদালতে আপিল করেন। হাতে লেখা একটি আবেদনের মাধ্যমে তিনি হাইকোর্টের স্থগিতাদেশের বিরুদ্ধে শুনানির ব্যবস্থা করেন। চেম্বার বিচারপতি ফারাহ মাহবুব হাইকোর্টের আদেশ স্থগিত করে দেন এবং আপিল বিভাগের পূর্ণাঙ্গ বেঞ্চে শুনানির জন্য ৩ সেপ্টেম্বর দিন ধার্য করেন। এই দ্রুত পদক্ষেপের ফলে ডাকসু নির্বাচনের পথে আইনি বাধা তাৎক্ষণিকভাবে দূর হয়, এবং নির্বাচনী কার্যক্রম অব্যাহত থাকার সুযোগ তৈরি হয়। শিশির মনিরের এই তৎপরতা না থাকলে, আদালতের ১৫ দিনের ছুটির কারণে আপিলের সুযোগ পাওয়া যেত না, এবং নির্বাচন সম্ভবত অনির্দিষ্টকালের জন্য পিছিয়ে যেত।

এই ঘটনা কেবল আইনি দ্রুততার উদাহরণই নয়, বরং ছাত্র রাজনীতির প্রেক্ষাপটে ডাকসুর গুরুত্বকেও তুলে ধরে। ডাকসু নির্বাচন বাংলাদেশের ছাত্র আন্দোলনের একটি প্রাণকেন্দ্র। এটি শিক্ষার্থীদের গণতান্ত্রিক অধিকার প্রকাশের প্ল্যাটফর্ম। হাইকোর্টের স্থগিতাদেশ এই গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়াকে বাধাগ্রস্ত করার ঝুঁকি তৈরি করেছিল। শিশির মনিরের তৎপরতা এই প্রক্রিয়াকে রক্ষা করেছে, যা ছাত্র সমাজের জন্য একটি বড় জয়। তবে এই ঘটনার পেছনে রাজনৈতিক টানাপোড়েনও লক্ষণীয়। রিটকারী বামজোটের অভিযোগে ফরহাদের ছাত্রশিবিরের সঙ্গে সম্পৃক্ততার বিষয়টি উঠে এসেছে, যা রাজনৈতিক দ্বন্দ্বের একটি দিককে ইঙ্গিত করে।

এই প্রেক্ষাপটে কিছু প্রশ্ন উঠে আসে। যারা নির্বাচনের পক্ষে, তাদের কেন শিশির মনিরের বিরুদ্ধে সমালোচনা করতে হবে? তিনি যে কাজটি করেছেন, তা তো ডাকসু নির্বাচনের পক্ষেই ছিল। তাঁর পেশাগত ভূমিকা এবং পূর্ববর্তী ক্লায়েন্টদের নিয়ে সমালোচনা কতটা যৌক্তিক? এই ঘটনায় রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে পারস্পরিক অভিযোগ আরও জোরালো হয়েছে, যা ছাত্র রাজনীতির জন্য ক্ষতিকর হতে পারে। আমাদের মনে রাখতে হবে, আইনজীবীর কাজ তাঁর মক্কেলের পক্ষে যুক্তি উপস্থাপন করা, এবং শিশির মনির তাঁর পেশাগত দায়িত্ব পালন করেছেন। তাঁর বিরুদ্ধে ব্যক্তিগত আক্রমণের পরিবর্তে নির্বাচনী প্রক্রিয়ার স্বচ্ছতা ও নিরপেক্ষতা নিশ্চিত করার দিকে মনোযোগ দেওয়া উচিত।

ডাকসু নির্বাচন নিয়ে এই আইনি লড়াই আমাদের সামনে কিছু গুরুত্বপূর্ণ বিষয় তুলে ধরেছে। প্রথমত, আইনি প্রক্রিয়ার দ্রুততা ও কার্যকারিতা গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া রক্ষায় কতটা গুরুত্বপূর্ণ, তা শিশির মনিরের কাজের মাধ্যমে স্পষ্ট। দ্বিতীয়ত, ছাত্র রাজনীতিতে দলীয় সংঘাতের প্রভাব নির্বাচনের মতো গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়াকে ক্ষতিগ্রস্ত করতে পারে। অবশেষে, আমাদের সবাইকে মনে রাখতে হবে যে ডাকসু নির্বাচন কেবল একটি প্রতিষ্ঠানের নির্বাচন নয়, এটি ছাত্র সমাজের গণতান্ত্রিক চেতনার প্রকাশ। এই চেতনাকে অক্ষুণ্ণ রাখতে সকল পক্ষের সহযোগিতা ও সংযম প্রয়োজন।

আমরা আশা করি, আগামী ৩ সেপ্টেম্বর আপিল বিভাগের শুনানি এই বিষয়ে চূড়ান্ত সমাধান আনবে, এবং ডাকসু নির্বাচন নির্ধারিত সময়ে সুষ্ঠুভাবে অনুষ্ঠিত হবে। শিশির মনিরের মতো তৎপর ব্যক্তিদের কারণেই গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া এগিয়ে চলে। আমাদের সকলের উচিত এই প্রক্রিয়াকে সমর্থন করা, অপপ্রচারে নয়।