আফগানিস্তানে ভয়াবহ ভূমিকম্প: ৮১২ জনের মৃত্যু, ২৮০০-এর বেশি আহত; উদ্ধার অভিযানে জরুরি সাহায্যের আহ্বান
তালিবান সরকারের মুখপাত্র জাবিহুল্লাহ মুজাহিদ জানিয়েছেন, ভূমিকম্পে কুনার এবং নাঙ্গারহার প্রদেশের একাধিক গ্রাম পুরোপুরি ধ্বংস হয়ে গেছে, যার মধ্যে নুরগালের মাজার-ই-দারা, চোকি, ওয়াটপুর, মানোগাই এবং চাপা দারা অন্যতম। উদ্ধারকারী দলগুলো হেলিকপ্টারের সাহায্যে আহতদের সরিয়ে নিচ্ছে এবং ধ্বংসস্তূপের নিচে আটকে পড়া লোকজনের খোঁজ চালাচ্ছে। ভারী বৃষ্টি এবং ভূমিধসের কারণে অনেক এলাকায় যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে, যা উদ্ধার অভিযানকে জটিল করে তুলেছে। আফগান স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র শরাফাত জামান বলেছেন, "এলাকাটির যোগাযোগ ব্যবস্থা সীমিত হওয়ায় সঠিক সংখ্যা নির্ধারণ করা কঠিন, কিন্তু মৃত্যুর সংখ্যা আরও বাড়তে পারে।"
আফগান মিডিয়া যেমন টোলো নিউজ এবং পাজহওক আফগান নিউজ থেকে পাওয়া তথ্য অনুসারে, কুনার প্রদেশে সবচেয়ে বেশি ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে, যেখানে ৮০০ জনের মৃত্যু হয়েছে এবং ২৫০০-এর বেশি আহত। নাঙ্গারহারের দারাই নুর জেলায় ১২ জনের মৃত্যু এবং ২৫৫ জন আহত হয়েছেন। লগমান প্রদেশে ৫৮ জন আহত, কিন্তু কোনো মৃত্যু নেই। আন্তর্জাতিক মিডিয়া যেমন বিবিসি, রয়টার্স, নিউ ইয়র্ক টাইমস এবং আল জাজিরা থেকে যাচাই করে দেখা গেছে, মৃত্যুর সংখ্যা ক্রমাগত বাড়ছে, এবং কিছু গ্রাম পুরোপুরি বিলীন হয়ে গেছে। নিউ ইয়র্ক টাইমস জানিয়েছে, ভূমিকম্পের কেন্দ্রস্থল থেকে ১০০ মাইল দূরের কাবুলেও লোকজন ঘর ছেড়ে রাস্তায় বেরিয়ে এসেছিল।
এই ভূমিকম্পটি ২০২৩ সালের অক্টোবরে হেরাত প্রদেশে ঘটে যাওয়া ৬.৩ মাত্রার ভূমিকম্পের স্মৃতি উসকে দিয়েছে, যেখানে ২০৬০ জনের মৃত্যু হয়েছিল এবং ১২৪০ জন আহত হয়েছিলেন। সেই ঘটনায়ও গ্রামগুলো ধ্বংস হয়ে গিয়েছিল, এবং আন্তর্জাতিক সাহায্যের প্রয়োজন পড়েছিল। জাতিসংঘের মতে, আফগানিস্তানের ৪২ মিলিয়ন জনসংখ্যার অর্ধেকের বেশি মানুষ সাহায্যের প্রয়োজনীয়তায় রয়েছে, কিন্তু আন্তর্জাতিক সাহায্য কমে গেছে।
ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ভূমিকম্পে ক্ষতিগ্রস্তদের সাহায্যের প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন, বলেছেন, "ভূমিকম্পে প্রাণহানিতে গভীরভাবে দুঃখিত... ভারত প্রয়োজনীয় সাহায্য প্রদানে প্রস্তুত।" পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী শেহবাজ শরীফও দুঃখ প্রকাশ করেছেন এবং সাহায্যের জন্য যোগাযোগ করেছেন। চীনের রাষ্ট্রদূত জাও শিং সাহায্যের প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। সৌদি আরবও সহানুভূতি জানিয়েছে। আফগান ক্রিকেটার রশিদ খান তার ওয়ার্ল্ড কাপ ফি দান করেছেন।
আফগানিস্তান হিন্দুকুশ অঞ্চলে ভূমিকম্পপ্রবণ এলাকা, যেখানে ভারতীয় এবং ইউরেশিয়ান প্লেটের সংঘর্ষের কারণে ঘন ঘন কম্পন হয়। উদ্ধার অভিযান চলমান থাকায় মৃত্যুর সংখ্যা আরও বাড়তে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। তালিবান সরকার একটি বিশেষ কমিটি গঠন করেছে এবং ১০০ মিলিয়ন আফগানি বরাদ্দ করেছে। আন্তর্জাতিক সংস্থা যেমন WHO, UN, IFRC-কে সাহায্যের আহ্বান জানানো হয়েছে।
(এই প্রতিবেদনটি আন্তর্জাতিক এবং আফগান মিডিয়া সোর্স থেকে যাচাইকৃত তথ্যের ভিত্তিতে তৈরি করা হয়েছে।