Website Logo

Sunday, July 27, 2025 02:27 PM

ড. ইউনূসের পররাষ্ট্রনীতি: ভারসাম্য, স্বচ্ছতা ও অন্তর্ভুক্তির পথে বাংলাদেশ অর্থনীতির নবযাত্রা

ড. ইউনূসের পররাষ্ট্রনীতি: ভারসাম্য, স্বচ্ছতা ও অন্তর্ভুক্তির পথে বাংলাদেশ অর্থনীতির নবযাত্রা

ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে বাংলাদেশের অন্তর্বর্তীকালীন সরকার পররাষ্ট্রনীতিতে এক নতুন দিগন্ত উন্মোচন করেছে, যেখানে ভারসাম্য, স্বচ্ছতা ও অন্তর্ভুক্তি মূলমন্ত্র হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে। এই নীতির মাধ্যমে দেশটি আন্তর্জাতিক সম্পর্ক ও অর্থনৈতিক উন্নয়নের ক্ষেত্রে নতুন সম্ভাবনার দ্বার উন্মুক্ত করছে।

ভারসাম্যপূর্ণ কূটনীতি ও আঞ্চলিক সম্পর্কের পুনর্গঠন

ইউনূস সরকার ভারতের সঙ্গে সম্পর্ক পুনর্গঠনে গুরুত্ব দিয়েছে। গ্লোবাল সাউথ সামিটে ড. ইউনূস তারুণ্যের শক্তি ও সম্ভাবনা তুলে ধরে ভারতের সঙ্গে সহযোগিতার আহ্বান জানান। এছাড়াও, বন্যা পরিস্থিতি মোকাবিলায় ভারতীয় রাষ্ট্রদূতের সঙ্গে আলোচনায় সহযোগিতা চান, যা কৌশলগতভাবে ভারতের প্রতি সমালোচনা নয় বরং সহযোগিতার আহ্বান। পাকিস্তানের সঙ্গে ১৫ বছরের বৈরিতা ঘুচিয়ে নতুন সম্পর্ক স্থাপনের পথে অগ্রসর হচ্ছে ইউনূস সরকার। সার্ক পুনরুদ্ধারের কথা বলছে, যা পূর্ববর্তী সময়ে স্থবির হয়ে গিয়েছিল। পাকিস্তান থেকে প্রকাশ্যে অস্ত্র ক্রয় করার মাধ্যমে ভারত এবং মিয়ানমারকে কৌশলগত বার্তা দিচ্ছে সরকার।

আন্তর্জাতিক মঞ্চে সক্রিয়তা ও আর্থিক সহযোগিতা

ড. ইউনূসের নেতৃত্বে বাংলাদেশ আন্তর্জাতিক মঞ্চে সক্রিয় ভূমিকা পালন করছে। জাতিসংঘের ইন্টারন্যাশনাল কনভেনশন ফর দ্য প্রোটেকশন অফ অল পারসন্স ফ্রম এনফোর্সড ডিসঅ্যাপিয়ারেন্সেস (ICPPED) চুক্তিতে সই করার মাধ্যমে দেশে রাজনৈতিক গুম বা খুনের ঘটনার আন্তর্জাতিক নজরদারি নিশ্চিত করেছে। পাচার হওয়া অর্থ ফিরিয়ে আনা এবং ব্যাংকিং খাত সংস্কারে বিশেষ কমিশন গঠন করতে যাচ্ছে সরকার।

যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে অর্থনৈতিক সংলাপ শুরু করার পরিকল্পনা করেছে ইউনূস সরকার। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের অর্থ, পররাষ্ট্র ও বাণিজ্য দপ্তর ও ইউএসএইডের কর্মকর্তাদের সঙ্গে ঢাকায় উচ্চ-পর্যায়ের অর্থনৈতিক সংলাপ অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা রয়েছে, যেখানে বাংলাদেশের আর্থিক ও মুদ্রানীতির পাশাপাশি আর্থিক খাতের বর্তমান পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনা হবে।

আসিয়ান সদস্যপদের লক্ষ্যে অগ্রসরতা

আঞ্চলিক সহযোগিতা বাড়াতে ইউনূস সরকার বাংলাদেশকে আসিয়ানের সদস্যপদ পেতে আগ্রহী। আসিয়ান হলো এমন একটি প্ল্যাটফর্ম যা ভারত নির্ভরতা কাটিয়ে বাংলাদেশের অর্থনৈতিক মুক্তির দ্বার উন্মোচন করতে পারে। বাংলাদেশ আসিয়ানের সদস্য হলে, দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশগুলোর সঙ্গে আরও ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক স্থাপন সম্ভব হবে, যা নতুন সম্ভাবনা তৈরি করবে। তবে আসিয়ানের সদস্যপদ পাওয়ার পথে চ্যালেঞ্জও রয়েছে। মালয়েশিয়া, ইন্দোনেশিয়া, ব্রুনেই, এবং ফিলিপাইনের সমর্থন পাওয়া গেলেও মিয়ানমার এবং ভিয়েতনাম বিরোধিতা করতে পারে। থাইল্যান্ড, সিঙ্গাপুর, এবং কম্বোডিয়ার সমর্থন পেতে হলে বাংলাদেশের ধৈর্যশীল কূটনৈতিক প্রচেষ্টা প্রয়োজন।

জাতীয় অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা ও ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা

জাতির উদ্দেশে দেওয়া ভাষণে ড. ইউনূস উল্লেখ করেন যে, সরকার রাজস্ব আদায়ে গতি আনতে অনলাইনে আয়কর রিটার্ন জমা দিতে উৎসাহিত করছে। আন্তর্জাতিক সাহায্য সংস্থাগুলোর প্রধানদের সঙ্গে বৈঠকে তারা বাংলাদেশকে সর্বাত্মকভাবে সাহায্যের আগ্রহ ব্যক্ত করেছেন। চীনের পররাষ্ট্র মন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠকে চীনের পক্ষ থেকে যাবতীয় সাহায্যের আশ্বাস পাওয়া গেছে। এই সহায়তা আসা শুরু করলে অর্থনীতি মজবুত এবং আকর্ষণীয় হয়ে উঠবে, যা বিদেশী বিনিয়োগকারীদের বিনিয়োগে উৎসাহিত করবে।

জাতিসংঘে তিন-শূন্য ধারণা ও জলবায়ু সংকট মোকাবিলা

জাতিসংঘে দেওয়া ভাষণে ড. ইউনূস 'তিন-শূন্য' ধারণা উপস্থাপন করেন, যার মাধ্যমে শূন্য দারিদ্র্য, শূন্য বেকারত্ব এবং শূন্য নেট কার্বন নিঃসরণ অর্জনের কথা বলেন। তিনি উল্লেখ করেন যে, তরুণ-তরুণীরা চাকরি প্রার্থী না হয়ে উদ্যোক্তা হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করার সুযোগ পাবে। সামাজিক ব্যবসার মাধ্যমে অর্থনৈতিক কাঠামোতে পরিবর্তন এনে জলবায়ুর ধ্বংসাত্মক গতি রোধ করা সম্ভব বলে তিনি বিশ্বাস করেন।


ড. ইউনূসের পররাষ্ট্রনীতি বাংলাদেশের জন্য এক নতুন দিগন্ত উন্মোচন করেছে, যেখানে ভারসাম্য, স্বচ্ছতা ও অন্তর্ভুক্তি মূলমন্ত্র হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে। আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক সহযোগিতার মাধ্যমে অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা অর্জন এবং জলবায়ু সংকট মোকাবিলায় সরকার সক্রিয় ভূমিকা পালন করছে। এই নীতির সফল বাস্তবায়ন বাংলাদেশের অর্থনীতিকে নতুন উচ্চতায় নিয়ে যাবে এবং আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে দেশের অবস্থানকে সুদৃঢ় করবে।