সিরিয়ান অবজারভেটরি ফর হিউম্যান রাইটস (এসওএইচআর) জানিয়েছে, সিরিয়ার সুইদা প্রদেশে চলমান সংঘর্ষে ২৬ জুলাই, ২০২৫ পর্যন্ত ১,৩৮৬ জন নিহত হয়েছে, যার মধ্যে ৩৮৬ জন বেসামরিক নাগরিক। ১৩ জুলাই, ২০২৫ থেকে তীব্র হওয়া এই সংঘর্ষ দক্ষিণ সিরিয়ায় আরব বেদুইন উপজাতি এবং দ্রুজ সম্প্রদায়ের মধ্যে উত্তেজনা থেকে উদ্ভূত হয়েছে। বেদুইন উপজাতিরা একজন দ্রুজ ব্যক্তিকে অপহরণ করে তার গাড়ি বাজেয়াপ্ত করার পর এই সংঘর্ষ শুরু হয়।
পার্সটুডের একটি প্রতিবেদনে ইরানি সূত্রের বরাতে বলা হয়েছে, সিরিয়ার প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় এবং স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সংঘর্ষের সময় ২৩৮ জনকে খোলা মাঠে মৃত্যুদণ্ড দিয়েছে। এসওএইচআর এই ঘটনার তদন্ত এবং দোষীদের শাস্তির জন্য একটি স্বাধীন আন্তর্জাতিক কমিটি গঠনের আহ্বান জানিয়েছে।
১৫ জুলাই, ২০২৫-এ সিরিয়ার সেনাবাহিনী এবং জননিরাপত্তা বাহিনী শান্তি ফিরিয়ে আনতে সুইদায় প্রবেশ করে, কিন্তু দ্রুজ সম্প্রদায়ের আধ্যাত্মিক নেতা এই বাহিনীগুলোর বিরুদ্ধে অপরাধমূলক কার্যক্রম বন্ধে তাৎক্ষণিক আন্তর্জাতিক হস্তক্ষেপের আহ্বান জানান। দ্রুজ সম্প্রদায়ের সমর্থনের দাবিদার ইসরাইল সুইদার দিকে অগ্রসর হওয়া সিরিয়ার সামরিক যানবাহনের উপর হামলা শুরু করে। ১৬ জুলাই, ২০২৫-এ ইসরাইল দামেস্কের বেশ কয়েকটি কৌশলগত স্থানে বোমা হামলা চালায়, যার মধ্যে সিরিয়ার সেনাবাহিনীর জেনারেল স্টাফ ভবনও রয়েছে। ইসরাইল এই হামলাকে দামেস্কের প্রতি সতর্কবার্তা হিসেবে উল্লেখ করে।
এই হামলার পর সিরিয়ার প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় একটি যুদ্ধবিরতি চুক্তির অধীনে সুইদা থেকে তার সমস্ত বাহিনী প্রত্যাহারের ঘোষণা দেয়। এদিকে, কুনেইত্রা প্রদেশের “মাজরা আবু মাজরা” শহরে ইসরাইলি সৈন্যদের সংক্ষিপ্ত অনুপ্রবেশের খবর পাওয়া গেছে, যা অধিকৃত গোলান মালভূমির কাছে অবস্থিত। তারা কয়েক ঘণ্টা অবস্থানের পর গোলানের দিকে পিছু হটে।
এক্স-এর পোস্টগুলোতে চলমান উত্তেজনার কথা উঠে এসেছে, যেখানে কিছু অযাচাইকৃত দাবি রয়েছে যে ইসরাইলি বাহিনী সুইদা থেকে প্রায় ৮০ কিলোমিটার দূরে দামেস্কের কাছাকাছি এগিয়েছে। অন্যান্য পোস্টে বেদুইন উপজাতি এবং দ্রুজদের মধ্যে সম্প্রদায়গত সংঘর্ষের উল্লেখ রয়েছে, এবং ইসরাইল দ্রুজ সম্প্রদায়কে সহায়তা প্রদান করছে বলে দাবি করা হয়েছে। তবে, এই দাবিগুলো আরও যাচাই ছাড়া নিশ্চিত নয়।
বাশার আল-আসাদ সরকারের পতনের পর থেকে ইসরাইল সিরিয়ার অবকাঠামো এবং সামরিক কেন্দ্রগুলোতে হামলার তীব্রতা বাড়িয়েছে। বর্তমান সরকারের সেনাবাহিনী গোলান এবং সিরিয়ার মূল ভূখণ্ডের মধ্যবর্তী বাফার জোন অতিক্রম করে দারা এবং কুনেইত্রা প্রদেশের গোলানের কাছাকাছি অঞ্চলগুলো দখল করে রেখেছে।
সুইদা এবং কুনেইত্রার পরিস্থিতি দক্ষিণ সিরিয়ার ভঙ্গুর নিরাপত্তা পরিস্থিতির ইঙ্গিত দেয়, যা আসাদ সরকারের পতনের পর ক্ষমতার শূন্যতায় আরও জটিল হয়ে উঠেছে। আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় এই অঞ্চলের উপর নজর রাখছে এবং উত্তেজনা কমানোর এবং জবাবদিহিতার আহ্বান ক্রমশ জোরালো হচ্ছে।
সূত্র: পার্সটুডে, সিরিয়ান অবজারভেটরি ফর হিউম্যান রাইটস, এক্স পোস্ট