২০২৫ সালের ২৬ জুলাই তারিখে itgenius24.com-এ প্রকাশিত মাইয়া ডেভিসের প্রতিবেদন অনুসারে গাজা উপত্যকার মানবিক পরিস্থিতি ভয়াবহ রূপ নিয়েছে। জাতিসংঘের বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচি (WFP) জানিয়েছে, তিনজনের একজন বহু দিন ধরে খাবার না পেয়েই দিন কাটাচ্ছে। অপুষ্টি ভয়াবহভাবে ছড়িয়ে পড়ছে, প্রায় ৯০,০০০ নারী ও শিশু জরুরি চিকিৎসার অপেক্ষায় রয়েছে।
গাজার হামাস-নিয়ন্ত্রিত স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্যানুযায়ী, যুদ্ধ শুরুর পর থেকে অপুষ্টির কারণে ১২২ জনের মৃত্যু হয়েছে, যার মধ্যে ৮৩ জনই শিশু। শুধু জুলাই ২৫ তারিখেই অতিরিক্ত ৯ জনের প্রাণহানি ঘটেছে।
সংকটের মূল কারণ
এই দুর্দশা শুরু হয়েছে মার্চ ২০২৫-এ ইসরায়েলের আরোপিত অবরোধের মাধ্যমে, যার ফলে প্রায় দুই মাস যাবত মানবিক সাহায্য বন্ধ ছিল। যদিও ইসরায়েল বলেছে তারা সাহায্যে বাধা দিচ্ছে না এবং হামাসকে দোষারোপ করেছে, তবে আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলো জানাচ্ছে—এই অবরোধ খাদ্য, ওষুধ ও জ্বালানির প্রবেশে মারাত্মক প্রভাব ফেলছে।
আন্তর্জাতিক প্রতিক্রিয়া ও সাহায্যের বিমান ছাড়
আন্তর্জাতিক চাপ বাড়ায় ইসরায়েল জানিয়েছে, বিদেশি রাষ্ট্রগুলো গাজায় সাহায্যের বিমান ছাড়তে পারবে। তবে জাতিসংঘসহ একাধিক সাহায্য সংস্থা এই পদক্ষেপকে “কর্মহীনতার ছল” বলে অভিহিত করেছে। জর্ডান ও সংযুক্ত আরব আমিরাতের বিমান ছাড়ার কথা থাকলেও, এখনো তারা ইসরায়েলের অনুমতি পায়নি।
যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী স্যার কিয়ের স্টার্মার বলেছেন, যুক্তরাজ্য এই উদ্যোগে অংশ নিতে প্রস্তুত—যদিও এটি “অনেক দেরিতে” এসেছে। তিনি শিশুদের জরুরি চিকিৎসার জন্য যুক্তরাজ্যে স্থানান্তরের পরিকল্পনাও ঘোষণা করেছেন।
বিতর্ক ও সহিংসতার অভিযোগ
GHF নামক মানবিক ফাউন্ডেশন, যেটি মে ২০২৫-এ চালু হয় এবং যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরায়েল দ্বারা সমর্থিত, সেটিকে কেন্দ্র করে ব্যাপক বিতর্ক সৃষ্টি হয়েছে। UN-এর রিপোর্ট অনুসারে, এই ফাউন্ডেশনের বিতরণ কেন্দ্রগুলোতে খাদ্য নিতে গিয়ে ১,০০০ জন ফিলিস্তিনির মৃত্যু হয়েছে। এসব কেন্দ্র ইসরায়েলি সামরিক এলাকায় অবস্থিত এবং মার্কিন বেসরকারি নিরাপত্তা সংস্থা দ্বারা পরিচালিত।
একজন প্রাক্তন নিরাপত্তা কর্মী দাবি করেছেন, তিনি বেসামরিক লোকদের ওপর সরাসরি গোলাবর্ষণ ও ট্যাংক ব্যবহার দেখেছেন, যা “যুদ্ধাপরাধ”। GHF এই অভিযোগ অস্বীকার করেছে।
যুদ্ধবিরতির আলোচনা ও রাজনৈতিক পদক্ষেপ
যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরায়েলের প্রতিনিধিরা কাতারে আলোচনায় অংশ নিয়েছিল, কিন্তু পরে তারা সরে আসে। প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প বলেন, “হামাস আলোচনায় আগ্রহী নয়।” তবে হামাস জানায়, আলোচনা ভেঙে পড়েনি এবং ইসরায়েলের প্রতিনিধি দল আবার ফিরবে।
ফ্রান্স জানিয়েছে, তারা সেপ্টেম্বর মাসে একটি ফিলিস্তিন রাষ্ট্রকে স্বীকৃতি দিতে চায়। যুক্তরাজ্যের এক-তৃতীয়াংশ এমপি প্রধানমন্ত্রীর কাছে অনুরোধ করেছেন একই পদক্ষেপ নিতে।
গাজার মানুষের কণ্ঠস্বর
হেদায়া আল-মুতাও’ই নামের এক মা জানিয়েছেন, তার ১৮ মাস বয়সী ছেলে মোহাম্মাদ অপুষ্টিতে আক্রান্ত হয়ে মাত্র ৬ কেজি ওজনের। অনেক স্থানীয় সাংবাদিক নিজে না খেয়ে পরিস্থিতির খবর প্রকাশ করছেন। তাদের একজন বলেন, “আমরা যেন একটি স্থগিত মৃত্যুদণ্ডের মধ্যে আছি।”
জরুরি পদক্ষেপের আহ্বান
জাতিসংঘ মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস এ সংকট মোকাবেলায় জরুরি ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য বিশ্বকে আহ্বান জানিয়েছেন।