সফরের প্রেক্ষাপট
ইউনূসের চীন সফরের কৌশলগত দিক
চীন দীর্ঘদিন ধরে বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় বাণিজ্যিক অংশীদার এবং উন্নয়নের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ মিত্র। তাই সেদিক থেকে বিচার করলে ইউনূসের চীন সফরের একটি ধারাবাহিক দিক রয়েছে। ক্ষমতা থেকে অপসারণের এক মাসেরও কম সময় আগে হাসিনা নিজেই চীন সফর করেন। এর পাশাপাশি এই সফর দিক পরিবর্তনের একটি ইঙ্গিত হতে পারে , বিশেষ করে সম্পর্কে ভারসাম্য বজায় রাখার। ইউনূসের দলে অবকাঠামো, জ্বালানি এবং টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা (এসডিজি) বিষয়ক উপদেষ্টাদের অন্তর্ভুক্ত থাকার বিষয়টি বোঝায় যে, এই সফরটি নিছক প্রতীকী সফরের চেয়ে বেশি কিছু । অন্তর্বর্তী সরকার অবকাঠামো, পুনর্নবীকরণযোগ্য জ্বালানি, স্বাস্থ্য এবং বাণিজ্য ও বিনিয়োগসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে চীনের সঙ্গে সহযোগিতা বিস্তৃত করতে চাইছে। চীন এই সুযোগটি কাজে লাগাতে আগ্রহী বলে মনে হচ্ছে। চীনা কর্মকর্তারা এই সফরটিকে নিছক আনুষ্ঠানিকভাবে না দেখে আরও বিস্তৃত কৌশলগত সহযোগিতার ভিত্তি হিসেবে দেখেন– বিশেষ করে যখন দুই দেশ ২০২৫ সালে কূটনৈতিক সম্পর্কের ৫০ বছর পূর্তি করছে।
চীনের সাথে তার আলাপ-আলোচনায় মূলত নিম্নলিখিত বিষয়গুলো উঠে এসেছে:ক্ষুদ্রঋণ কার্যক্রম: ড. ইউনুস তাঁর গ্রামীণ ব্যাংকের ধারণা উপস্থাপন করেছেন, যা দরিদ্র জনগোষ্ঠীর আর্থিক ক্ষমতায়নের জন্য কার্যকর। চীনের গ্রামাঞ্চলের দরিদ্র জনগোষ্ঠীর উন্নয়নে এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে।
সামাজিক ব্যবসা: চীনের নীতিনির্ধারকরা সামাজিক ব্যবসায় ব্যবস্থার প্রতি আগ্রহ দেখিয়েছেন, যা ক্ষুদ্র ও মাঝারি উদ্যোক্তাদের জন্য সম্ভাবনার দ্বার উন্মোচন করতে পারে।
টেকসই উন্নয়ন: পরিবেশবান্ধব প্রযুক্তি এবং ব্যবসার উন্নয়ন নিয়ে আলোচনা হয়েছে, যা পৃথিবীজুড়ে জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবেলায় কার্যকর হবে।
চীনের প্রতিক্রিয়া :
ড. ইউনুসের সফরের প্রতিক্রিয়া চীনের বিভিন্ন সেক্টরে ইতিবাচক হয়েছে। বিশেষত, চীনের শিক্ষা ও গবেষণা প্রতিষ্ঠানগুলো তাঁর সাথে সহযোগিতা করতে চায়। ক্ষুদ্রঋণের মডেল এবং সামাজিক ব্যবসায়ের উদ্ভাবনী ধারণা চীনের অর্থনৈতিক উন্নয়ন এবং সামাজিক সাম্যবাদে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারে।
সফরের প্রভাব
এই সফর থেকে ভবিষ্যতে চীনে ড. ইউনুসের কার্যক্রম আরও বিস্তৃত হতে পারে। তাঁর সামাজিক ব্যবসায়ের প্রতিষ্ঠানগুলো চীনের বিভিন্ন জায়গায় চালু করার সম্ভাবনা রয়েছে। পাশাপাশি চীনের উদ্যোক্তারা ক্ষুদ্রঋণ কার্যক্রমের মাধ্যমে আর্থিক স্বাধীনতা অর্জনের পথে এগিয়ে যেতে পারেন।
ড. মুহাম্মদ ইউনুসের চীন সফর কেবল দুটি দেশের মধ্যে সহযোগিতার নজির নয়, বরং এটি বৈশ্বিক পর্যায়ে আর্থ-সামাজিক সমস্যার সমাধানের একটি উদ্যোগ। তাঁর সামাজিক ব্যবসায় এবং ক্ষুদ্রঋণের ধারণা বিশ্বজুড়ে দরিদ্র জনগোষ্ঠীর জন্য আলোকিত ভবিষ্যতের আশা জাগিয়েছে। চীনের মতো একটি বৃহৎ অর্থনীতির দেশে এই ধারণাগুলো সফলভাবে প্রয়োগ করা গেলে তা অন্যান্য দেশকেও অনুপ্রাণিত করতে পারে।
এই সফরটি চীনের সাথে বাংলাদেশের সম্পর্কের ক্ষেত্রে নতুন দিগন্তের সূচনা করেছে এবং ড. ইউনুসের উদ্যোগ বিশ্বজুড়ে উন্নয়নের প্রতীক হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে।