ITGenius24 Logo

Sunday, November 23, 2025 01:43 AM

নেপালে উত্তপ্ত বিক্ষোভ: প্রেসিডেন্ট ও প্রধানমন্ত্রীর বাসভবনে অগ্নিসংযোগ, পদত্যাগের দাবিতে জনতার হুঙ্কার

নেপালে উত্তপ্ত বিক্ষোভ: প্রেসিডেন্ট ও প্রধানমন্ত্রীর বাসভবনে অগ্নিসংযোগ, পদত্যাগের দাবিতে জনতার হুঙ্কার
নেপালে উত্তপ্ত বিক্ষোভ: প্রেসিডেন্ট ও প্রধানমন্ত্রীর বাসভবনে অগ্নিসংযোগ, পদত্যাগের দাবিতে জনতার হুঙ্কার

নেপালের রাজধানী কাঠমান্ডুসহ বিভিন্ন অঞ্চলে তরুণ প্রজন্মের (জেন-জি) নেতৃত্বে চলমান বিক্ষোভ তীব্র আকার ধারণ করেছে। ৯ সেপ্টেম্বর ২০২৫, মঙ্গলবার, বিক্ষোভকারীরা প্রেসিডেন্ট রামচন্দ্র পৌদেল এবং প্রধানমন্ত্রী কেপি শর্মা ওলির বাসভবনে আগুন ধরিয়ে দিয়েছে বলে খবর পাওয়া গেছে। এই বিক্ষোভের মূলে রয়েছে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে সরকারি নিষেধাজ্ঞা, দুর্নীতির অভিযোগ এবং সোমবারের (৮ সেপ্টেম্বর) সংঘর্ষে ১৯ জনের মৃত্যুর ঘটনা, যার জন্য বিক্ষোভকারীরা প্রধানমন্ত্রী ওলির পদত্যাগ দাবি করছেন।

বিক্ষোভের পটভূমি

নেপাল সরকার গত ৪ সেপ্টেম্বর থেকে ফেসবুক, ইনস্টাগ্রাম, হোয়াটসঅ্যাপ, এক্স, ইউটিউবসহ ২৬টি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছিল, কারণ এই প্ল্যাটফর্মগুলো সরকারি নিবন্ধনের শর্ত পূরণ করেনি। এই নিষেধাজ্ঞার প্রতিবাদে জেন-জি তরুণরা রাস্তায় নেমে আন্দোলন শুরু করে। সোমবারের বিক্ষোভে পুলিশের গুলিতে ১৯ জন নিহত হওয়ার পর আন্দোলন আরও উত্তপ্ত হয়ে ওঠে। বিক্ষোভকারীরা দাবি করছেন, পুলিশ তাদের লক্ষ্য করে সরাসরি গুলি চালিয়েছে, যদিও পুলিশের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, তারা শূন্যে গুলি চালিয়েছিল।

প্রেসিডেন্ট ও প্রধানমন্ত্রীর বাসভবনে আগুন

ভারতীয় সংবাদমাধ্যম এনডিটিভি এবং স্থানীয় গণমাধ্যম কাঠমান্ডু পোস্টের প্রতিবেদন অনুসারে, মঙ্গলবার বিক্ষোভকারীরা প্রেসিডেন্ট রামচন্দ্র পৌদেলের সরকারি বাসভবনে ঢুকে ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করেছে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া ভিডিওতে দেখা গেছে, বিক্ষোভকারীরা ভবনের ভেতরে ঘুরে বেড়াচ্ছে এবং জানালা-দরজা ভাঙছে। একইভাবে, প্রধানমন্ত্রী কেপি শর্মা ওলির বাসভবনেও আগুন ধরানোর খবর পাওয়া গেছে। এছাড়া, সাবেক প্রধানমন্ত্রী পুষ্পকমল দাহাল ‘প্রচণ্ড’, শের বাহাদুর দেউবা, জ্বালানিমন্ত্রী দীপক খাড়কা, যোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তিমন্ত্রী পৃথ্বী সুব্বা গুরুং, উপ-প্রধানমন্ত্রী বিষ্ণু পাউডেল এবং নেপাল রাষ্ট্রীয় ব্যাংকের গভর্নর বিশ্ব পাউডেলের বাসভবনেও হামলা ও ভাঙচুরের ঘটনা ঘটেছে। নেপালি কংগ্রেসের কেন্দ্রীয় কার্যালয় এবং কমিউনিস্ট পার্টির সদর দফতরও বিক্ষোভকারীদের লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত হয়েছে।

সরকারের প্রতিক্রিয়া ও কারফিউ

তীব্র বিক্ষোভের মুখে সরকার সোমবার রাতেই সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের উপর নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করলেও পরিস্থিতি শান্ত হয়নি। কাঠমান্ডু, ললিতপুর ও ভক্তপুর জেলায় মঙ্গলবার সকাল থেকে অনির্দিষ্টকালের জন্য কারফিউ জারি করা হয়েছে। তবে, বিক্ষোভকারীরা কারফিউ উপেক্ষা করে রাস্তায় নেমে আন্দোলন অব্যাহত রেখেছে। কাঠমান্ডুর নিউ বানেশ্বর, কালেঙ্কি এবং ললিতপুরের চাঁপাগাঁওসহ বিভিন্ন এলাকায় টায়ার জ্বালিয়ে এবং পাথর নিক্ষেপ করে বিক্ষোভ চলছে। পুলিশ বিক্ষোভকারীদের ছত্রভঙ্গ করতে চেষ্টা করলেও বলপ্রয়োগ এড়িয়ে চলছে।

প্রধানমন্ত্রী ওলি মঙ্গলবার সন্ধ্যা ৬টায় সর্বদলীয় জরুরি বৈঠক ডেকেছেন পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনার জন্য। এদিকে, সোমবার সন্ধ্যায় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী রমেশ লেখক পদত্যাগ করেছেন, এবং মন্ত্রিসভার কয়েকজন সদস্য সরকারের কার্যক্রম থেকে নিজেদের দূরে রাখছেন।

রাজনৈতিক চাপ ও জনতার দাবি

বিক্ষোভকারীদের প্রধান দাবি এখন প্রধানমন্ত্রী ওলির পদত্যাগ। নেপালি কংগ্রেসের সাধারণ সম্পাদক গগন থাপা ১৯ জনের মৃত্যুর নৈতিক দায় নিয়ে ওলির পদত্যাগ দাবি করেছেন। বিক্ষোভকারী নারায়ণ আচার্য বলেন, “আমরা এখানে বিক্ষোভ করছি কারণ আমাদের তরুণ ও বন্ধুদের হত্যা করা হচ্ছে। আমরা ন্যায়বিচার চাই এবং এই সরকারের উৎখাত চাই।” আরেক বিক্ষোভকারী দুর্গানা দাহাল বলেন, “যতক্ষণ এই সরকার ক্ষমতায় আছে, জনগণ ভুগতে থাকবে।” স্লোগানে উঠছে, “কেপি চোর, দেশ ছোড়” এবং “শিশু হত্যা বন্ধ করো”।

আন্তর্জাতিক প্রতিক্রিয়া

ভারত সরকার নেপালে অবস্থানরত তাদের নাগরিকদের জন্য সতর্কতা জারি করেছে এবং পরিস্থিতি নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করছে। ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এক বিবৃতিতে বলেছে, “নেপালে সহিংস ঘটনায় বহু তরুণ প্রাণ হারিয়েছে, আমরা গভীরভাবে শোকাহত। আমরা আশা করি, নেপালের সব পক্ষ সংযম দেখাবে এবং শান্তিপূর্ণ সংলাপের মাধ্যমে সমাধানে পৌঁছাবে।” ভারত-নেপাল সীমান্তে নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে।

সামাজিক মাধ্যমের ভূমিকা

এক্স প্ল্যাটফর্মে প্রকাশিত পোস্টে দেখা গেছে, স্থানীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যবেক্ষকরা এই বিক্ষোভকে “জেন-জি আন্দোলন” হিসেবে চিহ্নিত করছেন, যা কমিউনিস্ট শাসনের বিরুদ্ধে তরুণদের ক্ষোভের প্রকাশ। কাঠমান্ডু পোস্টের একটি সম্পাদকীয়তে বলা হয়েছে, “প্রধানমন্ত্রী ওলির উচিত সোমবারের হত্যাকাণ্ডের দায় নিয়ে অবিলম্বে পদত্যাগ করা।”



নেপালে চলমান বিক্ষোভ এখন সামাজিক মাধ্যমের নিষেধাজ্ঞার প্রতিবাদ ছাড়িয়ে সরকারবিরোধী আন্দোলনে রূপ নিয়েছে। প্রেসিডেন্ট ও প্রধানমন্ত্রীর বাসভবনে অগ্নিসংযোগ এবং অন্যান্য নেতাদের বাড়িতে হামলা সরকারের উপর জনগণের ক্ষোভের তীব্রতা প্রকাশ করছে। বিশ্লেষকদের মতে, এই আন্দোলন প্রধানমন্ত্রী ওলির সরকারের পতনের সম্ভাবনাকে আরও বাড়িয়ে তুলেছে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে সরকার কী পদক্ষেপ নেয়, তা এখন নিবিড় পর্যবেক্ষণের বিষয়।