ITGenius24 Logo

Sunday, November 23, 2025 01:44 AM

নতুন উদ্যোক্তা: বাংলাদেশের সফলতার গল্প

নতুন উদ্যোক্তা: বাংলাদেশের সফলতার গল্প
এই ছবিটি প্রতীকী অর্থে ব্যবহৃত হয়েছে এবং এটি কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই) প্রযুক্তি দ্বারা তৈরি।

বাংলাদেশের অর্থনীতি গত দুই দশকে উল্লেখযোগ্য প্রবৃদ্ধি অর্জন করেছে, এবং এই অগ্রগতির পেছনে তরুণ উদ্যোক্তাদের অবদান অনস্বীকার্য। প্রযুক্তির প্রসার, সৃজনশীল চিন্তাভাবনা এবং দৃঢ় মনোভাবের মাধ্যমে বাংলাদেশের তরুণরা নিজেদের স্বপ্নকে বাস্তবে রূপ দিচ্ছেন। এই প্রতিবেদনে আমরা কয়েকজন সফল বাংলাদেশী উদ্যোক্তার গল্প তুলে ধরবো, যারা তাদের অদম্য ইচ্ছাশক্তি ও উদ্ভাবনী ক্ষমতা দিয়ে দেশের অর্থনৈতিক ল্যান্ডস্কেপ পরিবর্তন করছেন।

আয়াজ নাসিম: মল্লিক গ্রুপ অফ ইন্ডাস্ট্রিজ

আয়াজ নাসিম, মল্লিক গ্রুপ অফ ইন্ডাস্ট্রিজের পরিচালক, বাংলাদেশের তরুণ উদ্যোক্তাদের মধ্যে একটি উজ্জ্বল নাম। তিনি তার পারিবারিক ব্যবসাকে নতুন উচ্চতায় নিয়ে গেছেন, প্রযুক্তি ও উদ্ভাবনী আইডিয়ার মাধ্যমে। মাত্র পাঁচ বছরে তার কোম্পানির টার্নওভার প্রায় চারগুণ বৃদ্ধি পেয়েছে। তার ব্যবসা পাট, পাটের বস্তা, কাপড়, ব্যাগ, এবং পেপার মিলের পণ্য যেমন রাইটিং ও প্রিন্টিং অফসেট পেপার নিয়ে কাজ করে। এই পণ্যগুলো ভারত, রাশিয়া, যুক্তরাষ্ট্র, দুবাইসহ বিভিন্ন দেশে রপ্তানি হচ্ছে। আয়াজের পরিকল্পনার মধ্যে রয়েছে আটা-ময়দা এবং সিমেন্ট রপ্তানির উদ্যোগ। তার ব্যবসার একটি গুরুত্বপূর্ণ দিক হলো পরিবেশবান্ধব পণ্য উৎপাদন, যেমন পাট দিয়ে পলিথিন তৈরির উদ্ভাবন। বর্তমানে তার মিলগুলোতে প্রায় চার হাজার কর্মী কাজ করছেন, এবং তিনি আগামী বছরের মধ্যে এই সংখ্যা দশ হাজারে উন্নীত করার লক্ষ্য নিয়েছেন। এছাড়া, তিনি পাবনায় সুবিধাবঞ্চিত শিশুদের জন্য একটি বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করেছেন, যা তার সামাজিক দায়বদ্ধতার প্রমাণ বহন করে।

আবেদ সরকার: স্বাধীন উদ্যোক্তা

নরসিংদীর তরুণ উদ্যোক্তা আবেদ সরকার মাত্র ২০ বছর বয়সে ‘স্বাধীন উদ্যোক্তা’ নামে একটি ডিজিটাল এজেন্সি প্রতিষ্ঠা করেন। প্রযুক্তির প্রতি তার আগ্রহ তাকে ফ্রিল্যান্সিং জগতে প্রবেশ করতে উৎসাহিত করে, এবং ১৯ বছর বয়স থেকেই তিনি এই ক্ষেত্রে কাজ শুরু করেন। তার এজেন্সি ওয়েব ডিজাইন, ডেভেলপমেন্ট এবং ব্যবসায়িক সমাধান প্রদান করে, বিশেষ করে ছোট স্টার্টআপ কোম্পানিগুলোর জন্য। আবেদের মতে, সঠিক মার্কেটিংয়ের অভাবে অনেক স্টার্টআপ তাদের সম্ভাবনা পুরোপুরি কাজে লাগাতে পারে না। তার এজেন্সি এই সমস্যার সমাধান দেয়। তিনি তরুণদের উদ্দেশে বলেন, সোশ্যাল মিডিয়ায় সময় নষ্ট না করে নতুন দক্ষতা শেখার জন্য সময় ব্যয় করলে সাফল্য অর্জন সহজ হয়। তার সাফল্য প্রমাণ করে যে, প্রযুক্তির সঠিক ব্যবহার এবং দৃঢ় মনোভাব বাংলাদেশের তরুণদের জন্য নতুন সম্ভাবনার দ্বার উন্মোচন করতে পারে।

আফরোজা আনিকা: গুঁড়া মসলার ব্যবসা

আফরোজা আনিকা ২০১৯ সালে মাত্র ১৫০০ টাকা পুঁজি নিয়ে ফেসবুক পেজ খুলে গুঁড়া মসলার ব্যবসা শুরু করেন। তিন বছরের মধ্যে তিনি ১২ ধরনের মসলা নিয়ে কাজ শুরু করেন এবং লাখোপতি হয়ে ওঠেন। তার সাফল্যের মূলে রয়েছে ফেসবুক গ্রুপ এবং ব্যক্তিগত প্রোফাইলের মাধ্যমে পণ্যের প্রচার। প্রাথমিকভাবে মাসে ৫-১০ কেজি মসলা বিক্রি হলেও, এখন তার সাপ্তাহিক বিক্রি তিনগুণ বেড়েছে। আনিকা বলেন, “আমি ভয় পাই না, আমি জয় করি সাহসের সাথে আমার সব বাধা।” তার গল্প প্রমাণ করে যে, অল্প পুঁজি এবং সঠিক পরিকল্পনার মাধ্যমে অনলাইন প্ল্যাটফর্মে সাফল্য অর্জন সম্ভব।

রুবাইদা রিয়াত রাখী: ঘরের তৈরি খাবার

রুবাইদা রাখী ঢাকার ব্যস্ত চাকরিজীবী ও ব্যাচেলরদের জন্য ঘরের তৈরি খাবার নিয়ে কাজ করছেন। তিনি দেশীয় ১০০ রকমের ভর্তা, ভাজি এবং হারিয়ে যাওয়া আঞ্চলিক খাবার নিয়ে ব্যবসা শুরু করেন। তার ব্যবসা এখন প্রায় ৫০০ জনের খাবারের অর্ডার নেয়। রাখী বলেন, “শুরুটা কখনোই সহজ হয় না। মেধা, শ্রম, বুদ্ধি এবং সততা দিয়ে এগিয়ে যেতে হয়।” তিনি কাজকে তার প্যাশন হিসেবে নিয়েছেন এবং কখনো বাধার কাছে হার মানেননি। তার সাফল্য অনলাইন খাদ্য ব্যবসার সম্ভাবনাকে তুলে ধরে।

রাশেদুল: এশিয়ান আইকনিক অ্যাওয়ার্ড বিজয়ী

রাশেদুল মাত্র সাড়ে চার হাজার টাকা পুঁজি নিয়ে তার উদ্যোগ শুরু করেন এবং ২০২৫ সালে নেপালে এশিয়ান আইকনিক অ্যাওয়ার্ড পান। তার গল্প বাংলাদেশের তরুণদের জন্য একটি বড় অনুপ্রেরণা। অল্প পুঁজি দিয়ে শুরু করে তিনি কীভাবে আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি অর্জন করেছেন, তা প্রমাণ করে যে দৃঢ় সংকল্প এবং কঠোর পরিশ্রম সাফল্যের চাবিকাঠি।


বাংলাদেশের এই তরুণ উদ্যোক্তারা প্রমাণ করেছেন যে বয়স, অভিজ্ঞতা বা পুঁজির সীমাবদ্ধতা সাফল্যের পথে বাধা নয়। প্রযুক্তির সঠিক ব্যবহার, সৃজনশীল চিন্তাভাবনা এবং অধ্যবসায়ের মাধ্যমে তারা দেশের অর্থনীতিতে অবদান রাখছেন এবং নতুন প্রজন্মের জন্য পথ দেখাচ্ছেন। তাদের গল্প থেকে আমরা শিখতে পারি যে, বাধা অতিক্রম করার সাহস এবং নতুন কিছু শেখার ইচ্ছা থাকলে অসম্ভবকেও সম্ভব করা যায়।