ITGenius24 Logo

Sunday, November 23, 2025 01:42 AM

দ্য মেসেজ: ইসলামের উদ্ভবের এক মহাকাব্যিক যাত্রা

দ্য মেসেজ: ইসলামের উদ্ভবের এক মহাকাব্যিক যাত্রা
প্রিয় পাঠকবৃন্দ, আজ আমরা আপনাদের নিয়ে যাবো এক অসাধারণ যাত্রায়—যেখানে একজন মানুষের আহ্বান একটি সম্পূর্ণ সভ্যতাকে বদলে দিয়েছে। ১৯৭৬ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত 'দ্য মেসেজ' (আরবি নাম: 'আল-রিসালাহ') ছবিটি ইসলামের প্রতিষ্ঠাতা হযরত মুহাম্মদ (সা.)-এর জীবনীভিত্তিক এক মহাকাব্য। পরিচালক মুস্তাফা আক্কাদের এই ছবি ইসলামী ঐতিহ্যকে সম্মান করে তৈরি করা হয়েছে—যেখানে নবীজিকে সরাসরি দেখানো হয়নি, বরং তাঁর দৃষ্টিকোণ থেকে গল্পটি উন্মোচিত হয়। অভিনয়ে আছেন অ্যান্থনি কুইন (হামজা চরিত্রে), আইরিন পাপাস এবং মাইকেল অ্যানসারা। এই ছবি শুধু ইতিহাস নয়, বরং সাহস, বিশ্বাস এবং পরিবর্তনের এক অনুপ্রেরণাদায়ক গল্প। চলুন, গল্পের স্রোতে ডুবে যাই...

সপ্তম শতাব্দীর আরব উপদ্বীপ। মক্কা শহর—যেখানে পৌত্তলিকতা, দাসত্ব এবং অসমতার অন্ধকার ছড়িয়ে আছে। ধনী-দরিদ্রের ব্যবধান চরম, নারীরা অধিকারহীন, এবং কাবা ঘরে ৩৬০টি মূর্তির পূজা চলছে। এই অন্ধকারের মাঝে আলো হয়ে আসেন একজন সাধারণ ব্যবসায়ী, মুহাম্মদ। ছবিটি শুরু হয় তাঁর জীবনের এক টার্নিং পয়েন্ট দিয়ে: হিরা গুহায় একাকী ধ্যানে মগ্ন থাকাকালীন, ফেরেশতা জিবরাঈল (আ.) তাঁকে পরিদর্শন করেন। "পড়ো!"—এই আহ্বান দিয়ে শুরু হয় কুরআনের প্রথম আয়াতের অবতীর্ণ। মুহাম্মদের মনে জাগে এক নতুন বার্তা: এক আল্লাহর উপাসনা, সাম্য, ন্যায়বিচার এবং পৌত্তলিকতার বিরোধিতা।

প্রথমে এই বার্তা গোপনে ছড়িয়ে পড়ে। মুহাম্মদের স্ত্রী খাদিজা (রা.) প্রথম বিশ্বাসী হন, তারপর দাস বিলাল (রা.) এবং কয়েকজন ঘনিষ্ঠজন। কিন্তু যখন তিনি কাবায় দাঁড়িয়ে প্রকাশ্যে ঘোষণা করেন—"লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ"—তখন মক্কার কুরাইশ নেতারা ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠেন। আবু সুফিয়ান, আবু লাহাবের মতো শক্তিশালী ব্যক্তিরা এই নতুন ধর্মকে হুমকি মনে করেন। তারা মুসলিমদের নির্যাতন শুরু করেন: দাসদের চাবুক মারা, বয়কট, এমনকি হত্যা। এখানে উঠে আসে হামজা (মুহাম্মদের চাচা)—একজন সাহসী যোদ্ধা, যিনি ইসলাম গ্রহণ করে মুসলিমদের রক্ষক হয়ে ওঠেন। ছবিতে অ্যান্থনি কুইনের এই চরিত্রটি অসাধারণ—তাঁর রণহুংকার এবং বিশ্বাসের দৃঢ়তা দর্শককে মুগ্ধ করে।

নির্যাতনের মাত্রা বাড়তে থাকে। মুসলিমরা মক্কা ছেড়ে হাবশায় (আধুনিক ইথিওপিয়া) আশ্রয় নেন, যেখানে খ্রিস্টান রাজা নাজাশি তাদের সুরক্ষা দেন। কিন্তু মক্কায় অবস্থা আরও খারাপ হয়। অবশেষে, ৬২২ খ্রিস্টাব্দে আসে হিজরতের মুহূর্ত—মুহাম্মদ এবং তাঁর অনুসারীরা মদিনায় চলে যান। এই যাত্রা ছবিতে অত্যন্ত নাটকীয়ভাবে দেখানো হয়েছে: কুরাইশদের তাড়া, গুহায় লুকিয়ে থাকা, এবং মদিনায় উষ্ণ স্বাগত। মদিনায় মুসলিমরা একটি সম্প্রদায় গড়ে তোলেন—মসজিদ তৈরি করেন, ইহুদি এবং অন্যান্য উপজাতির সাথে চুক্তি করেন। কিন্তু শান্তি বেশিদিন স্থায়ী হয় না।

মক্কার কুরাইশরা যুদ্ধের প্রস্তুতি নেয়। প্রথম বড় যুদ্ধ বদর—যেখানে ৩১৩ জন মুসলিম ১০০০ জন কুরাইশকে পরাজিত করে। ছবিতে এই যুদ্ধের দৃশ্য অত্যন্ত রোমাঞ্চকর: তলোয়ারের ঝনঝনানি, সাহসের প্রদর্শন। কিন্তু পরের যুদ্ধ উহুদে মুসলিমরা পরাজিত হন, হামজা শহীদ হন। এরপর খন্দক যুদ্ধ—মদিনার চারপাশে খন্দক খনন করে শত্রুদের ঠেকানো হয়। এই যুদ্ধগুলোতে ছবি দেখায় কীভাবে বিশ্বাস এবং কৌশল দিয়ে দুর্বলরা শক্তিশালীদের জয় করে।

ছবির ক্লাইম্যাক্স আসে ৬৩০ খ্রিস্টাব্দে—মক্কা জয়। মুহাম্মদের নেতৃত্বে ১০,০০০ মুসলিম সেনা মক্কায় প্রবেশ করেন, কিন্তু কোনো রক্তপাত ছাড়াই। কাবার মূর্তিগুলো ভেঙে ফেলা হয়, এবং আবু সুফিয়ানের মতো শত্রুরা ইসলাম গ্রহণ করেন। ছবিতে এই মুহূর্তটি অত্যন্ত আবেগপূর্ণ—ক্ষমা, একতা এবং বিজয়ের প্রতীক। গল্প শেষ হয় মুহাম্মদের শেষ বার্তা দিয়ে: "আজ তোমাদের ধর্ম পূর্ণ হয়েছে।"

'দ্য মেসেজ' শুধু একটি ছবি নয়, এটি একটি বার্তা—যা আজও প্রাসঙ্গিক। এতে দেখানো হয়েছে কীভাবে একজনের সাহস একটি বিপ্লব ঘটাতে পারে। পত্রিকার পাঠকরা এই গল্প পড়ে নিশ্চয়ই ছবিটি দেখতে অনুপ্রাণিত হবেন। যদি সম্ভব হয়, অরিজিনাল আরবি ভার্সন দেখুন—তাতে ইতিহাস আরও জীবন্ত হয়ে ওঠে!