Website Logo

Sunday, July 27, 2025 05:59 AM

বিশ্বের সর্ববৃহৎ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান: ইন্দিরা গান্ধী ন্যাশনাল ওপেন ইউনিভার্সিটি (IGNOU)

বিশ্বের সর্ববৃহৎ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান: ইন্দিরা গান্ধী ন্যাশনাল ওপেন ইউনিভার্সিটি (IGNOU)
শিক্ষা হচ্ছে একটি জাতির ভিত্তি। একবিংশ শতাব্দীতে শিক্ষা ব্যবস্থার সম্প্রসারণ ও উদারীকরণের ফলে অনেক দেশ তাদের উচ্চশিক্ষা খাতে বৈপ্লবিক পরিবর্তন এনেছে। কিন্তু এর মধ্যেও একটি নাম বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য—ইন্দিরা গান্ধী ন্যাশনাল ওপেন ইউনিভার্সিটি (IGNOU)। এটি শুধু ভারতেরই নয়, বরং বিশ্বের সবচেয়ে বড় শিক্ষা প্রতিষ্ঠান হিসেবে স্বীকৃত, যার শিক্ষার্থী সংখ্যা এক কোটির কাছাকাছি পৌঁছে গেছে। IGNOU প্রতিষ্ঠিত হয় ১৯৮৫ সালে ভারতের সংসদের একটি আইন অনুযায়ী। এর মূল উদ্দেশ্য ছিল, এমন একটি "ওপেন এবং ডিস্টেন্স লার্নিং" (ODL) ব্যবস্থা গড়ে তোলা, যার মাধ্যমে উচ্চশিক্ষা সমাজের সকল স্তরের মানুষের কাছে সহজলভ্য হবে।

প্রতিষ্ঠাকালীন সময়ে IGNOU-র শিক্ষার্থী সংখ্যা ছিল মাত্র ৪,৫০০ জন। বর্তমানে, এটি ৩৫টি দেশে ও ভারতের প্রতিটি রাজ্যে বিস্তৃত হয়েছে, যার শিক্ষার্থী সংখ্যা ৪০ লাখেরও বেশি এবং তা প্রতিনিয়ত বাড়ছে। এই বিশাল বিস্তৃতির জন্যই IGNOU-কে বিশ্বের বৃহত্তম বিশ্ববিদ্যালয় হিসেবে গণ্য করা হয়। IGNOU-র মূল বৈশিষ্ট্য হলো দূরশিক্ষা (Distance Education)। এটি এমন শিক্ষার্থীদের জন্য আদর্শ, যারা সময় বা ভৌগোলিক সীমাবদ্ধতার কারণে সরাসরি বিশ্ববিদ্যালয়ে উপস্থিত হতে পারেন না।

মুদ্রিত পাঠ্যসামগ্রী:
  •  প্রতিটি কোর্সের জন্য আলাদা করে তৈরি পাঠ্যবই সরবরাহ করা হয়।
  •     অডিও-ভিজ্যুয়াল সামগ্রী: ই-গাইড, ইউটিউব ভিডিও ও রেডিও প্রোগ্রামের মাধ্যমে শিক্ষার্থীরা সহায়ক শিক্ষা গ্রহণ করতে পারেন।
  •     অনলাইন লার্নিং প্ল্যাটফর্ম (SWAYAM ও eGyanKosh): এতে শিক্ষার্থীরা মোবাইল বা কম্পিউটারের মাধ্যমে ক্লাস ও মূল্যায়ন নিতে পারেন।
  •     স্টাডি সেন্টার: ভারতের বিভিন্ন জায়গায় প্রায় ২০০০টিরও বেশি স্টাডি সেন্টার আছে, যেখানে সরাসরি ক্লাস নেওয়া ও পরামর্শ গ্রহণের সুযোগ রয়েছে।

কোর্স ও প্রোগ্রামের বৈচিত্র্য : IGNOU ২০০টিরও বেশি প্রোগ্রাম অফার করে, যার মধ্যে রয়েছে:
  •     ডিপ্লোমা ও সার্টিফিকেট কোর্স (৬ মাস থেকে ১ বছর মেয়াদি)
  •     ব্যাচেলর ও মাস্টার্স ডিগ্রি (UG এবং PG)
  •     M.Phil ও PhD প্রোগ্রাম

কর্মমুখী ও দক্ষতা উন্নয়নমূলক কোর্স (যেমন: ফুড প্রসেসিং, ট্যুরিজম, লাইব্রেরি সায়েন্স)


এই বিশ্ববিদ্যালয়ের সবচেয়ে জনপ্রিয় কোর্সগুলোর মধ্যে রয়েছে:
  •     ব্যাচেলর অফ আর্টস (BA)
  •     মাস্টার অফ কমার্স (M.Com)
  •     মাস্টার অফ সোশ্যাল ওয়ার্ক (MSW)
  •     ব্যাচেলর ইন এডুকেশন (B.Ed)
  •     MBA
অন্তর্ভুক্তিমূলক শিক্ষা
IGNOU একমাত্র প্রতিষ্ঠান যা শিক্ষার সর্বজনীন অধিকার বাস্তবে প্রয়োগ করে। এটি বিভিন্ন বয়স, পেশা ও আর্থিক অবস্থার শিক্ষার্থীদের সুযোগ দিয়ে থাকে।
  •     নারী শিক্ষার্থী: IGNOU-তে নারী শিক্ষার্থীর সংখ্যা প্রায় ৪৫%।
  •     প্রবীণ নাগরিক: অবসরের পরেও অনেক প্রবীণ নাগরিক এখানে পড়াশোনা করেন।
  •     কারাবন্দী শিক্ষার্থী: ভারতে অনেক জেলে IGNOU স্টাডি সেন্টার আছে, যেখানে বন্দিরাও উচ্চশিক্ষা গ্রহণ করতে পারেন।
IGNOU শুধু ভারতের মধ্যেই সীমাবদ্ধ নয়। সংযুক্ত আরব আমিরাত, সৌদি আরব, আফগানিস্তান, মালয়েশিয়া, কাতার, সিঙ্গাপুর, দক্ষিণ আফ্রিকা, নেপাল ও শ্রীলঙ্কা সহ ৩৫টিরও বেশি দেশে IGNOU-এর স্টাডি সেন্টার রয়েছে। এটি বিশ্বব্যাপী ভারতীয় অভিবাসী ও বিদেশি শিক্ষার্থীদের জন্য এক অন্যতম শিক্ষার উৎস।

IGNOU-এর পাঠ্যক্রম ভারত সরকারের জাতীয় মূল্যায়ন ও স্বীকৃতি কাউন্সিল (NAAC) কর্তৃক স্বীকৃত। এছাড়াও বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন (UGC), অল ইন্ডিয়া কাউন্সিল ফর টেকনিক্যাল এডুকেশন (AICTE) এবং NCTE থেকেও স্বীকৃতি প্রাপ্ত। ২০২১ সালে IGNOU NAAC থেকে A++ গ্রেড অর্জন করে, যা একটি বড় অর্জন।

বিশ্বের সবচেয়ে বড় শিক্ষা প্রতিষ্ঠান হিসেবে IGNOU-এর কিছু চ্যালেঞ্জও রয়েছে:
  •     পরীক্ষা মূল্যায়নের ধীরগতি: অনেক সময় শিক্ষার্থীদের রেজাল্ট পেতে বিলম্ব হয়।
  •     ব্যক্তিগত যোগাযোগের অভাব: দূরশিক্ষার কারণে শিক্ষার্থীদের ব্যক্তিগত মেন্টরিং বা নিয়মিত ফিডব্যাক সীমিত থাকে।
  •     প্রযুক্তিগত ব্যবধান: প্রত্যন্ত অঞ্চলের শিক্ষার্থীদের জন্য ই-লার্নিং প্রক্রিয়ায় অংশগ্রহণ সবসময় সহজ নয়।
IGNOU ভবিষ্যতে:
  •     আরও ইন্টারেক্টিভ ও ভার্চুয়াল ক্লাসরুম চালু করবে
  •     আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি বাড়াতে ইউনেস্কো ও অন্যান্য আন্তর্জাতিক সংস্থার সঙ্গে যৌথ উদ্যোগে কোর্স চালু করবে
  •     প্রতিবন্ধী ও প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর জন্য আরও সহায়ক শিক্ষা কৌশল প্রণয়ন করবে
ইন্দিরা গান্ধী ন্যাশনাল ওপেন ইউনিভার্সিটি শুধু একটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান নয়, এটি একটি আন্দোলন, যা শিক্ষা ব্যবস্থার বাধা দূর করে কোটি কোটি মানুষের জীবনে পরিবর্তন এনেছে। IGNOU প্রমাণ করেছে, শিক্ষা মানে শুধু ক্লাসরুমে উপস্থিতি নয়—শিক্ষা মানে সমান সুযোগ, অন্তর্ভুক্তি এবং মানবিক উন্নয়ন।