ইসরায়েল ও ইরানের মধ্যে চলমান সামরিক উত্তেজনার কারণে মধ্যপ্রাচ্যের অনেক দেশ তাদের আকাশপথ সাময়িকভাবে বন্ধ করে দিয়েছে। এই সিদ্ধান্তের ফলে শত শত বাণিজ্যিক বিমান চলাচলে ব্যাঘাত সৃষ্টি হয়েছে এবং হাজার হাজার যাত্রী বিশ্বের বিভিন্ন বিমানবন্দরে আটকা পড়েছেন।
গত কয়েক সপ্তাহ ধরে ইসরায়েল ও ইরানের মধ্যে যুদ্ধ পরিস্থিতি প্রায় অবশ্যম্ভাবী হয়ে উঠেছে। ইরানের ইসলামি বিপ্লবী গার্ড বাহিনী (IRGC) এবং ইসরায়েলি প্রতিরক্ষা বাহিনীর (IDF) মধ্যে সীমান্তবর্তী অঞ্চল, বিশেষ করে সিরিয়া ও লেবাননের ওপর দিয়ে বেশ কয়েক দফা পাল্টাপাল্টি ড্রোন ও ক্ষেপণাস্ত্র হামলা হয়েছে। সম্প্রতি তেহরানের একটি সামরিক স্থাপনায় ইসরায়েলি হামলার জবাবে ইরান মধ্যপ্রাচ্যজুড়ে নিজস্ব সামরিক প্রস্তুতি জোরদার করে।
এই উত্তেজনার প্রেক্ষাপটে সংযুক্ত আরব আমিরাত, কুয়েত, কাতার, বাহরাইন ও ওমানসহ বেশ কয়েকটি উপসাগরীয় দেশ আকাশপথ বন্ধের ঘোষণা দিয়েছে। সৌদি আরব ও জর্ডান আংশিক নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে। এসব দেশ জানিয়েছে, আঞ্চলিক নিরাপত্তা ও বেসামরিক বিমান যাত্রীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতেই এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
বিশ্বের অন্যতম ব্যস্ত আকাশপথ হিসেবে মধ্যপ্রাচ্য বহু আন্তর্জাতিক ফ্লাইটের রুটে গুরুত্বপূর্ণ সেতুবন্ধন হিসেবে কাজ করে। দুবাই, দোহা ও আবু ধাবির মতো ট্রানজিট হাবগুলো বন্ধ হওয়ায় ইউরোপ-এশিয়া বিমান চলাচল মারাত্মকভাবে ব্যাহত হচ্ছে। এর ফলে অনেক এয়ারলাইন বিকল্প রুট গ্রহণ করতে বাধ্য হচ্ছে, যার ফলে সময় ও ব্যয় দুই-ই বেড়েছে।
বিশ্লেষকরা মনে করছেন, এই সংকট যদি দীর্ঘস্থায়ী হয়, তবে বৈশ্বিক বিমান পরিবহন শিল্পে মারাত্মক প্রভাব ফেলতে পারে। IATA (International Air Transport Association) জানিয়েছে, প্রতিদিন গড়ে ৫০০-এর বেশি বিমান এই অঞ্চল অতিক্রম করে, যার মধ্যে অন্তত ৩০ শতাংশ ট্রানজিট ফ্লাইট।
এদিকে জাতিসংঘ মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস দুই পক্ষকে শান্ত থাকার আহ্বান জানিয়ে বলেছেন, “এই সংঘাতের পরিণতি শুধু ইসরায়েল ও ইরানের মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকবে না, এটি গোটা বিশ্বকে অস্থিতিশীল করে তুলতে পারে।” যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, এবং ইউরোপীয় ইউনিয়ন শান্তিপূর্ণ সমাধানের আহ্বান জানিয়েছে।
তবে বাস্তব পরিস্থিতি বলছে, দ্বিপাক্ষিক আলোচনার কোনো সুযোগ আপাতত নেই। ইসরায়েল জানিয়েছে, তাদের জাতীয় নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হলে তারা ইরান-সমর্থিত গোষ্ঠীগুলোর বিরুদ্ধে অভিযান চালাতে বাধ্য হবে। অন্যদিকে ইরান এই হামলাকে তাদের সার্বভৌমত্বের লঙ্ঘন হিসেবে চিহ্নিত করেছে এবং “উপযুক্ত প্রতিশোধ” নেওয়ার হুমকি দিয়েছে।
বিশ্বের অর্থনৈতিক বিশ্লেষকরা আশঙ্কা করছেন, এই উত্তেজনার কারণে তেল ও গ্যাস সরবরাহ ব্যাহত হতে পারে, যার ফলে বিশ্ববাজারে জ্বালানির দাম আরও বাড়বে।
বর্তমানে যাত্রী ও বাণিজ্যিক বিমান পরিবহন প্রতিষ্ঠানগুলো সংকট সামাল দিতে বিকল্প রুট ও সময়সূচি নিয়ে কাজ করছে। তবে আকাশপথ পুনরায় স্বাভাবিক হতে কত সময় লাগবে, তা এখনই বলা যাচ্ছে না।